ইউক্রেনে নিজেদের দখলে থাকা এলাকাগুলো রক্ষায় রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। প্রেসিডেন্ট পুতিনও ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ হুমকিতে পড়লে পারমাণবিক বোমা মারার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে হঠাৎ চাপে পড়া রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি যে ধাপ্পাবাজি নয়, তা খোদ পুতিনই বলেছেন। ভলোদিমির জেলেনস্কিও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্ররা। তারা এবার সেই কাল্পনিক হামলা মোকাবিলায় ব্যাপক আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞরাও দিচ্ছেন নানা মতামত।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা এটা মনে করেন না যে রাশিয়ার নেতা পুতিন পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবেন। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এমন সম্ভাব্য দৃশ্যপট রয়েছে, যা এ ধরনের বোমা ব্যবহারের সম্ভাবনাকে খুলে দিতে পারে বলেও মনে করেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের ম্যাথু ক্রোনিগের মতে, রাশিয়াকে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সংকল্পকে প্রতিফলিত করছে। তাদের এ তৎপরতা রাশিয়ার পারমাণবিক হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের মনোভাব উসকে দিতে এবং বৃহত্তর পরিসরে পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াই আরও মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন গত বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে বলেন, তার দেশের ভূখণ্ড হুমকিতে পড়লে পারমাণবিক বোমার (সম্ভাব্য) ব্যবহার নিয়ে তিনি কোনো ধাপ্পাবাজি করছেন না। পুতিন বলেন, ‘যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে তাদের জেনে রাখা উচিত, হাওয়া তাদের দিকে ঘুরে যেতে পারে। এটা কোনো ধাপ্পাবাজি নয়।’

তবে বিশ্লেষকরা বলেন, পারমাণবিক হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হলে মস্কো এক বা একাধিক ‘ট্যাকটিক্যাল’ বা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত রাখতে পারে। কারণ ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করলে এর লক্ষ্য হবে, দেশটিকে আত্মসমর্পণ করা বা সমঝোতায় আসার জন্য ভয় দেখানো এবং দেশটিকে সমর্থন করা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি। ট্যাকটিক্যাল বোমার নকশা এমনভাবে করা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে যার প্রভাব থাকে সীমিত। অন্যদিকে সর্বাত্মক লড়াই পরিচালনা ও জেতার লক্ষ্য নিয়েই তৈরি করা হয় স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক অস্ত্র।

হোয়াইট হাউজের সাবেক পরমাণুনীতি বিশেষজ্ঞ জন উলফসথল যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সাবস্ট্যাককে বলেন, সম্ভবত এমন দৃশ্যের অবতারণা করা হবে; যাতে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো ও পুতিনবিরোধী বৈশ্বিক ঐকমত্যে চিড় ধরে।

এদিকে পারমাণবিক বোমা হামলা নিয়ে পুতিনের এ চাপা হুমকির কাছে নিজেদের দুর্বল হিসেবে দেখাতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। তবে এ বিষয়টি যেন পরস্পরকে মুখোমুখি দাঁড় না করায় তাও এড়াতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। কারণ তা না হলে যুদ্ধের আরও বিস্তার ঘটাতে, এমনকি বিশ্বজুড়ে বিপর্যয়কর পারমাণবিক যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে।